Self-love

Writer: Tanzim Noor, Trainee Counselor, Freedom Within

নিজের যত্ন নেয়াটা কি? কেমন করে নিজের যত্ন নেয়া যায়? কেন নিজের যত্ন নিতে হয়? নিজের যত্ন নেয়া কি স্বার্থপরতা? কতগুলো প্রশ্ন মাথায় এলো। এর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব।

আমাদের পারিপার্শ্বিক, সামাজিক অবস্থান থেকে স্বভাবতই আমরা অন্যের ভালো করতে চাই। সবসময় অন্যের চিন্তা করি। কখনও কখনও নিজেকে উপেক্ষা করেই। নিজে কষ্ট পেলেও অন্যকে সুখী করার চেষ্টা করি। দিন শেষে নিজেই দুঃখি হই। আর বলি “আমাকে কেউ বোঝেনা”।

আমাদের ছোটবেলায় পড়া বই পুস্তকে এমন এক ধরনের ধারনা থাকে তাছাড়া পারিবারিক ইতিহাস,  লালন পালন থেকেই একটা ধারনা জন্মে। নি‌জের প্রয়োজন ও চা‌হিদা‌কে উ‌পেক্ষা ক‌রে অন্যের খেয়াল করা যেন ভালো মানুষ হবার প্রথম শর্ত।  সত্যি কি তাই? ভালো মানুষ হতে হলে কি নিজেকে উপেক্ষা করে, নিজেকে বাদ দিয়ে শুধু অন্যর চিন্তা করতে হবে?

নিজের যত্ন কিভাবে নেয়া যায়? শুধু কি শারীরিক যত্ন নেয়া? মানসিক স্বাস্থ্যের অযত্ন যে কিভাবে শরীরের উপর পরে এবং তা কতটা কঠিন আকার নিতে পারে তা বেশির ভাগ মানুষেরই জানা নাই। কেন নিজেকে প্রাধান্য দিব? আমরাতো অন্যর দিকে তাকিয়ে থাকি। কখন অন্য এসে ভালোবাসা জানাবে। আমাদের প্রিয় মানুষ গুলোর গ্রহনযোগ্যতা আর ভালোবাসা না পেলে আমরা কষ্টে থাকি। কখনো কি তার উল্টোটা ভেবেছি? আমি আমাকে ভালোবাসছি কিনা? আমি আমাকে গ্রহন করতে পারছি কিনা? নিজের যত্ন নেয়া কি স্বার্থপরতা?

ছোটবেলার পাঠ” সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।” আর আমি? সে কি উপেক্ষিত থাকবে? নিজেকে উপেক্ষা করে, হারিয়ে ফেলে অন্যর দিকে শুধু তাকানো স্বাস্থ্যকর প্রক্রিয়া না।

লেখাটা ছোট করে আনি। নিজেকে আমরা যত্ন নিতে পারি শুধু শারীরিক ভাবে না, মানসিক ভাবেও নিজের যত্ন নেয়ার আবশ্যকতা খুব খুবই প্রয়োজন। নিজেকে আবিষ্কার করা এক ভীষন ভালোলাগা আর সাথে সাথে এক রকম কষ্টেরও জায়গা। কষ্ট বলতে আমরা আমাদের যোগ্যতা ও সামর্থ‌্য কে বোঝা ও সীমাবদ্ধতা‌কে দেখ‌তে পাওয়া, প্রকৃত অবস্থা‌কে গ্রহণ ক‌রে, নিজের কা‌ছে তা স্বীকার ক‌রে; বাস্তবতা‌কে গ্রহণ করা । এটা খানিকটা কষ্টের বৈকি। একটা মানুষ কখনো পারফেক্ট হতে পারেনা। সেটা আসা করেই আমরা কষ্টে থাকি। “ও পারছে আমি কেন পারছিনা” এর বদলে আমরা ভাবতে পারি “ও ওর মতো পারছে আমি আমার মতো পার‌ছি এবং আমার যোগ‌্যতা ও দক্ষতার উন্নয়ন ক‌রে আরও যা পার‌তে চাই তা পারবো এটা যৌ‌ক্তিক চিন্তা ও সিদ্ধান্ত।  

আর অ‌ন্যের দিকে অন্যের গ্রহযোগ্যতা না পেলে যে আমি গ্রহনযোগ্য নই এটা মস্ত বড় ভুল। “আমি কি করছি,  কেন করছি?” আমাদের নাসিমা আকতার আপার মতে এ দুটো প্রশ্নের উত্তর পেলেই আমরা আমাদের আচরণের দায়িত্ব নিতে পারি। সর্বোপরি নিজেকে নিজের গ্রহণ করাটা একটা ক্ষমতা যা আমরা করা থেকে বিরত থাকি।

নিজেকে নিজে গ্রহণ করলে অন্যদের দ্বারা গ্রহনযোগ্য হওয়ার এবং একই ভাবে নিজেকে নিজে সম্মান করলে অন্যদের দ্বারা সম্মা‌নিত হওয়ার রাস্তাটা অ‌নেকখা‌নি প্রশস্ত হয় কারণ আমার স‌চেতনতা ও নি‌জের দা‌য়িত্ব‌বোধ ও সম্মান‌বোধ আমার ম‌ধ্যে যে আত্ম‌বিশ্বাস তৈরী ক‌রে তা আমার আচরণ ও সম্পর্ক ব‌্যবস্থাপনায় প্রতিফ‌লিত হয় তখন অন‌্যরা সেই সম্মান টা করে এবং সেই জায়গাটায় সচেতন হয়। প্রতিটা সম্পর্কের একটা সীমা থাকে। সেই সীমাটা নির্ধারন করতে হবে নিজেকেই। এই ব্যাপারে আপনার অসচেতনতা আপনারই ক্ষতির কারণ হবে।

মুল কথায় আসি। নিজের যত্ন নেওয়াটা স্বার্থপরতা না। আমি দর্শন এর ছাত্রী। আল্লামা ইকবাল এর “খুদি দর্শন”, সক্রেটিস এর “নিজেকে জানো”…এ সবের প্রায়োরিটিতে নিজের সত্তার বিকাশ মুখ্য ভাবে এসেছে। নিজের দায়িত্ব নেয়া, নিজের সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা একটা প্রক্রিয়া। রাতারাতি আমরা সেটা অর্জন করতে পারবো না। অন্যকে দোষারোপ করাটা খুব সহজ কিন্তু তা আমা‌দের অবস্থা ও অবস্থান এর ইতিবাচক প‌রিবর্তনে কোন ভূ‌মিকা রা‌খে না।  

একজন আপা বলেছেন “অন্যর ভালোই তো করতে চাই আপা… সংসারের জন্য জীবন দিলাম কি পেলাম? মেয়েরা জন্মেছে স্বার্থ ত্যাগ করার জন্য।“

একজন ভাই বলেছেন “একটা ছেলের তো সমস্ত  দায়িত্ব আপা… সংসারের ঘানি টেনে স্ত্রী, সন্তানের জন্য জীবন শেষ করলাম… রেজাল্ট একটা বিগ জীরো।“

অনেক কথা হলো। বাকিটাও কি আমি বলে দিব? তাহলে দায়িত্ব নেয়া হবেনা। আমি শুধু সচেতন করার চেষ্টা করলাম। আমি নিজেও সচেতনতার এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই আছি।

এবার আপনার পালা। ভালো থাকার, নিজেকে ভালো রাখার ক্ষমতা আপনারই হাতে। নিজের সেই ক্ষমতার উপল‌ব্ধি ও তার সুষ্ঠু ব্যবহার করেই দেখুন। নিজে যখন ভালো থাকবেন আলটিমেটলি আপনার পরিবার ও আশেপাশের সবাই কে ভালো রাখতে পারবেন।