Writer: Jannate Tabia, Girls Right Activist
সুস্থতা বলতে আমরা শুধু শারিরীক সুস্থতাকেই বুঝি। কিন্তু সেটা সম্পূর্ন ভুল ধারণা। বেঁচে থাকতে হলে আমাদের শারীরিক, মানসিক, ও সামাজিক সুস্থতা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
আমাদের সমাজ নারীর স্বাস্থ্যের ব্যাপারে কতটুকু সচেতন? আমার ধারণা, সতেচনতার ঘাটতি রয়েছে। একজন নারী অসুস্থ হলে ঘর সামলাবে কে? তার দৈনন্দিন গৃহস্থালির কাজ করে দেবে কে? এরকম নানা ভাবনার কারণে মেয়েরা নিজের যত্ন নেয়ার কথা ভুলেই যায়।
যে কোন সুস্থ ও বিকাশমান সমাজ তৈরির প্রাথমিক কারিগর মেয়েরা। তাই মেয়েদের সুস্থ রাখা মানে একটি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে সুস্থ রাখা।
আমাদের দেশে অধিকাংশ নারীরা বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে নারীরা ক্যালসিয়ামের ঘাটতি, স্তন ক্যান্সার, সার্ভিকাল ক্যান্সার, যৌন ও প্রজনন বিষয়ক রোগ, ঋতুস্রাব সংক্রান্ত জটিলতা, বিষাদগ্রস্থতা ও হরমোন সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে ভোগে থাকেন। কিন্তু এসবের কোনো কিছুই তারা কারো সাথে খোলামেলাভাবে আলোচনা করতে পারেন না। অসাবধানতাবশত কারণে এই সমস্যাগুলো দিনের পর দিন তারা লুকিয়ে রাখতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ফলে নারী স্বাস্থ্যের ব্যাপারটি আরো নাজুক আকার ধারণ করে।
শরীরের সাথে যে মনেরও যত্ন নেওয়া প্রয়োজন সেটাও অনেকেই জানেন না আর জানলেও অনেকেই সঠিকভাবে মানেন না। সামাজিক কাঠামো, জীবনযাপনের ধরন, লোকলজ্জা, পারিবারিক অবহেলা এবং কুসংস্কারের কারণে নারীরা তাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও একদম চুপ থাকেন। আবার অনেকেই নিজের সমস্যাগুলো বুঝেও সেগুলো নিয়ে কথা বলতে বিব্রতবোধ করেন। আর এই বিব্রতবোধের জন্যই সমস্যা গুলো আরো প্রকট হয় এবং জীবন দূর্বিষহ হয়ে ওঠে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক সমীক্ষায় দেখা গেছে বাংলাদেশের দুই কোটির বেশি মানুষ কোন না কোন মানসিক সমস্যায় ভুগছে এবং প্রাপ্ত বয়স্ক জনসংখ্যার ১৮ শতাংশ বিষন্নতায় আক্রান্ত এবং এদের বেশির ভাগই নারী।
আমাদের দেশে নারীরা নানা রকম শারীরিক অসুস্থতা, অপর্যাপ্ত ঘুম, সাংসারিক কাজের চাপ, যৌন ও শারিরীক নির্যাতন, ইভটিজিং-সহ নানা ধরনের মানসিক চাপের সম্মুখীন হোন। এসবের জন্য হতাশা, বিষন্নতা, কাজে অনীহাসহ নানা রকম মানসিক সমস্যায় ভুগতে থাকেন। ঘরের বাহিরে একজন পুরুষকে নিরাপত্তা নিয়ে যতটুকু না ভাবতে হয় নারীকে তার নিরাপত্তা নিয়ে দ্বিগুণ চিন্তিত থাকতে হয়। আমরা কি পেরেছি আমাদের মেয়েদের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে – স্বাস্থ্য হচ্ছে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক এই তিন অবস্থার একটি সুস্থ সমন্বয়। তাহলে একটু ভেবে দেখুন তো আমাদের নারীরা এই তিন অবস্থার সুস্থ সমন্বয়ে বসবাস করছেন কিনা? উত্তর যদি না হয়, তাহলে কিভাবে একজন নারী সব বাধা অতিক্রম করে আরো বেশি কর্মক্ষম হয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে?
সুতরাং নারীর শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারলেই আমরা সবার সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে পারবো।