মাসিক ও মানবাধিকার

Writer: Zahid Hossain, Human Rights Activist

মাসিক সংক্রান্ত প্রচলিত অবৈজ্ঞানিক ও অসত্য ধারণার ফলে নারী বঞ্চিত হয় মানবাধিকার থেকে।

প্রতিমাসের ‘শরীর খারাপ’ আর ‘অপবিত্রতা’র অনুভবের চক্র ধীরে ধীরে তাঁকে হীনম্মন্য করে তোলে। তাঁর নিজের শরীরই তাঁর প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। এ সময় সে বাইরে যেতে (Right to Movement) স্বস্তি বোধ করে না। নিজের ঘরেও আড়ষ্ট থাকে। নিজেকে অপাংক্তেয় মনে হওয়া এই দিনগুলোর রেশ চলে পরের দিনগুলোতেও। তাঁকে অশুচি অপয়া ভাবা হয়। এমনকি তাঁকে নিজেকেও অশুচি ভাবতে বাধ্য করা হয়। সে বঞ্চিত হয় মানবমর্যাদার অধিকার (Right to Dignity) থেকে।

তাঁকে আবদ্ধ রাখা হয় ঘরে। এ সময়ের নিরাপত্তাহীনতা আর ‘লজ্জা’র কারণে অনেক নারীশিশু ঝরে পড়ে বিদ্যালয় থেকে। লঙ্ঘিত হয় তার শিক্ষার অধিকার (Right to Education)।

মাসিককে একটা শারীরিক বৈকল্য বিবেচনা করে তাঁকে বঞ্চিত রাখা হয় বিশেষ কিছু কর্মের অধিকার (Right to Work) থেকে।

উপযুক্ত টয়লেট সুবিধা না থাকায় ক্ষুন্ন হয় তার উপযুক্ত কর্ম-পরিবেশের অধিকার (Right to Work in Favorable Environment)।

না খেয়ে, কম খেয়ে বা ভুল খাবার খেয়ে অথবা অস্বাস্থ্যকর নোংরা দ্রব্যাদি ব্যবহার করে, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার অভাবে নারী বঞ্চিত হয় স্বাস্থ্যের অধিকার (Right to Health) থেকে।

বাধাগ্রস্থ-ক্ষতিগ্রস্ত-অস্বীকৃত হয় তাঁর ব্যাক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার (Right to Privacy)। নীরবে সব সহ্য করানো বা সহ্য করতে শেখানোর মাধ্যমে হরণ করা হয় তাঁর মতপ্রকাশের অধিকারকে (Freedom of Expression)।

এই ক্রনিক বা সিস্টেমিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে সমাজে পোক্ত হয় জেন্ডার বৈষম্য। বেড়ে ওঠা কিশোরী মেয়েটার পায়ে, মাসিকের অসত্য ও অবৈজ্ঞানিক ধারণার সাথে সাথে, প্রতিমুহুর্তে পরানো হয় অজস্র অদৃশ্য শিকল। ফলে, মানুষ হয়ে জন্মানো আমাদের মেয়েরা প্রথাবদ্ধ চিন্তায় আবদ্ধ সমাজের অটোসাজেসন পেয়ে পেয়ে, অবশেষে, কেবল ‘মেয়ে’ই হয়ে ওঠে।