সুন্দর ক্যাম্পাস, সুন্দর মন

লেখকঃ শাহরুখ করিম, শিক্ষক, স্কুল অব হিউম্যান্স

শিক্ষার একটি সর্বোত্তম আদর্শ স্থান হলো বিদ্যালয়, যেখানে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহণ করে ভবিষ্যতের জন্য নিজেদের উত্তমরূপে গড়ে তোলে। আর উত্তমরূপে নিজেকে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন সুন্দর পরিবেশ(ক্যাম্পাস)। বিদ্যালয়ের পরিবেশের উপর শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য, আনন্দ ও কর্মক্ষমতা নির্ভর করে। এছাড়াও ”পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ”। এটা মনের উপরও প্রভাব বিস্তার করে । সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাস পরিবেশ ও মনকে পবিত্র ও সুন্দর করে তুলে। পরিচ্ছন্নতা দেহ ও মনের সৌন্দর্যের প্রতীক।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা শিক্ষার্থীদের স্বভাবজাত প্রেরণা। তাই স্বভাব যদি বিকৃত না হয় তাহলে শিক্ষার্থী নিজেও  পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করে এবং  তাদের ক্যাম্পাস ও সহপাঠীদেরও পরিচ্ছন্ন দেখতে ভালোবাসে।

“সুন্দর ক্যাম্পাস, সুন্দর মন” এই প্রতিপাদ্যকে মনে ধারণ করে কক্সবাজারের নাজিরারটেকে গড়ে উঠা সমাজের অবেহেলিত শিশুদের স্কুল “স্কুল অব হিউম্যান্সের”  শিক্ষার্থীরা প্রতি বৃহস্পতিবার তাদের স্কুল ক্যাম্পাস পরিষ্কার করে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানটি তারা স্ব-উদ্যেগে, হাসিমুখে এবংআনন্দের সহিত করে থাকে।

তাছাড়া স্কুল ক্যাম্পাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার আরো কয়েকটি মৌলিক কারণ হচ্ছে:

*স্কুল ক্যাম্পাসকে মশাসহ নানাধরণের পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে বাচাঁনো।

*স্কুল ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যবর্ধন।

*স্কুল ক্যাম্পাসকে ব্যবহার উপযোগী করা।

*স্কুল ক্যাম্পাসকে স্বাস্থ্যসম্মত রাখা।

যেভাবে আমরা নিজ নিজ স্কুল ক্যাম্পাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে ও রাখতে পারিঃ

আলো-বাতাসপূর্ণ উন্মুক্ত স্থানে বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। কলকারখানা, রেললাইন, ভারী যানবাহন চলাচলের রাস্তা, হাটবাজার থেকে বিদ্যালয় একটু দূরে হওয়া প্রয়োজন।  বিদ্যালয়ের আশেপাশে কোনো কবরস্থান, শ্মশান এবং নর্দমা থাকা উচিত নয়। বিদ্যালয়ের আঙিনা এবং খেলার মাঠে কোনো গর্ত থাকবে না।  বিশুদ্ধ পানির জন্য টিউবওয়েলের ব্যবস্থা থাকা উচিত।  স্কুলের কাছে ফেরিওয়ালা বিভিন্ন ধরনের অস্বাস্থ্যকর খাবার নিয়ে যাতে বসতে না পারে (সেক্ষেত্রে, খাবারের উচ্ছিষ্ট কমে যাবে)। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে স্কুল ক্যাম্পাস পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব নিতে হবে।  শ্রেণীকক্ষ ও বিদ্যালয়ের দেয়ালে যেকোনো ধরনের পোস্টার সাটানো থেকে বিরত থাকতে হবে (সেক্ষত্রে কাগজের উচ্ছিষ্ট কমে যাবে)। নির্দিষ্ট স্থানে থুথু বা ময়লা ফেলতে হবে।  স্কুল ক্যাম্পাসে ছেঁড়া কাগজ, বাদামের খোসা, ইটের টুকরো না ফেলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।  বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বৃষ্টি বা বর্ষার পানি জমে থাকলে নানা ধরনের রোগ ছড়াতে পারে ও দূর্ঘটনা ঘটতে পারে তাই বৃষ্টির পানি চলে যাওয়ার ব্যবস্থা  করতে হবে। ক্যাম্পাসের আশেপাশে অসুবিধা সৃষ্টিকারী গাছ  ডালপালা কেটে মশা, মাছি, পোকা-মাকড়ের উপদ্রব থেকে মুক্ত রাখতে হবে।

আমরা চেষ্টা করি আমাদের শিক্ষার্থীরা যাতে এই মানবিক গুণগুলো নিয়েই বেড়ে উঠে। কারণ পরিবারের পর বিদ্যালয়ই শিশুদের সামাজিকীকরণে অপরিহার্য ভূমিকা রাখে। সেজন্য আমি মনেকরি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি জীবনে চলার পথে অপরিহার্য এই শিক্ষাগুলোও দেয়া প্রয়োজন।